• বিশেষ প্রতিবেদন

মিছিল-স্লোগানে জনতার ঢল রংপুর নগরী

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০২ আগস্ট, ২০২৩ ১২:২৬:৩৫

ছবিঃ সিএনআই

রংপুর ব্যুরোঃ রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে খন্ড খন্ড মিছিলে মুখরিত আর জনতার ঢল নেমে এসেছে পুরো নগরী। স্লোগান মুখর রংপুর নগরের অলিগলিতে গণমানুষের ঢল নেমেছে জেলা স্কুলে আশপাশ সড়ককে।যেন মহাসমাবেশ শুরুর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হতে শুরু হয়েছে রংপুর জিলা স্কুল ও নগরী জুড়ে। 

বুধবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকেই রংপুর মহানগরীতে গণমানুষের ঢল থেকে ভাসতে থাকে 'শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা-স্বাগতম' স্লোগান। 

সকাল ৮টা থেকে সভাস্থল নগরীর ঐতিহাসিক রংপুর জিলা স্কুল মাঠে দূর-দূরান্ত থেকে রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরিহিত নেতাকর্মীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আসতে শুরু করে। 

রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আগমনে নগরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দুপুর ১২টার আগেই জনসভাস্থলসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে দাবি আয়োজকদের। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে মিছিল স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে জিলা স্কুলের আশপাশ ও রাস্তায়।। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলে দলে আসা নেতাকর্মীদের ঢল নামে জনসভাস্থলসহ জিলা স্কুল অভিমুখে। বাহারি সাজসজ্জা আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বিভিন্ন স্লোগানে নেচে গেয়ে উচ্ছাস করতে থাকেন তারা। 

নগরী ঘুরে দেখা যায়-লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দলবেঁধে একের পর এক আসতে শুরু করেন। বাস, ট্রেন, মাইক্রো বাস, পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজি করে নেতাকর্মীরা আসেন।অনেকে হেঁটেও জনসভাস্থলের দিকে রওনা দেন। 

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে নিরাপত্ত্বার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রংপুর মহানগরী। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা চৌকি এলাকায় বসানো হয়েছে। নগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশ রুট গুলোতে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশী করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে জনসভায় আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

নগরীর মেডিকেল মোড় এলাকা থেকে শাপলা চত্বর এলাকা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে কোনো ভারি যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নির্ধারিত ২১টি পয়েন্টে যানবাহন রেখে বিভিন্ন নেতার পক্ষ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভা অভিমুখে রওনা দেন। একইভাবে রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পুরুষ ও নারী নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সভাবেশস্থলে উপস্থিত হন।

সমাবেশ উপলক্ষ্যে নগরীর বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় বেড়েছে।জনসভা শুরুর আগে অনেকে সুরভি উদ্যান, চিড়িয়াখানা, চিকলি ওয়াটার পার্ক, সিটি চিকলি বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় সময় কাটিয়েছেন।নগরীর নয়নাভিরাম সড়কগুলোতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লোকজনদের ঘুরতে ও ছবি তুলতে দেখা যায়। এ ছাড়া জনসভাকে ঘিরে নগরীর হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বৃদ্ধি পায়।

মহাসমাবেশ ঘিরে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছাড়াও মাঠে নিরাপত্তায় আওয়ামী লীগের তিন শতাধিকের বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। জনসভায় আগত মানুষের জন্য আড়াই লাখ পানির বোতলের ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা বলেন স্মরণকালের মহাসমাবেশ হবে আজকে।১০ লাখের উপরে মানুষ উপস্থিত হয়েছে রংপুরে বিভিন্ন স্থানে। কানায় কানায় ভরে যাবে রংপুরের অলিগলি সহ সভামঞ্চে এলাকা।

আওয়ামী লীগের রংপুর মহানগরের যুগ্ন আহবায়ক আবুল কাশেম জানান আজকের এই মহাসমাবেশ সারাদেশে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন কানায় কানায় ভরে যাচ্ছে রংপুর ১০ লাখের উপরে মানুষ হবে আজকের এই সমাবেশে। তিনি আরো জানান নারী পুরুষ সহ বিভিন্ন শ্রেণীর ও পেশার মানুষ উপস্থিত হচ্ছেন এই জনসভায়।

এদিকে প্রায় এক যুগ পর রংপুরের পীরগঞ্জের লালদীঘির পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর আগমনে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কমতি নেই কোথাও। উজ্জ্বীবিত আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের ঢেউ বইছে। 

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম কালের কন্ঠকে বলেন, আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে সভা সমাবেশ করা হয়েছে। এখন গ্রামেগঞ্জ শহর-বন্দর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে রংপুর। পুরো বিভাগ থেকে অন্তত ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে।

রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান রনি জানান স্মরণকারের স্মরণীয় হয়ে থাকবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকের এই মহাসমাবেশ। লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছে আজকের এই জনসভা স্থলে। জামাত-বিএনপি নৈরাজ্য ঢাকাতে মানুষ আজ বুঝে দিচ্ছে। যে জনসভা কি জিনিস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসছেন আর রংপুরসহ সারাদেশ কাঁপছেন জেগে উঠছে তরুণ সমাজ যুব সমাজ।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, জনসভাকে ঘিরে সব ধরণের নিরাপত্বার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পোশাকী পুলিশের পাশাপাশি আর্মডসহ সাদাপোশাকী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। জনসভাস্থল ছাড়াও পথে পথে রুট ডিউটি, চেকপোস্ট, গুরুত্বপূর্ণ প্রবে পথ ও মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। উঁচু ভবনের ছাদে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে প্রশিক্ষিত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন।

আবু মারুফ হোসেন বলেন, জনসভাস্থল, পুরো শহর এবং সার্কিট হাউজ পুরোটাই আমরা সিসিটিভির কাভারেজে এনেছি। ১ হাজারেরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় আমরা বসিয়েছি। এটা আমরা ডিজিটালি মনিটরিং করা হচ্ছে।পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মাঠের ভিতরে এবং বাইরে রয়েছে।সাথে আয়োজকদের স্বেচ্ছাসেবককরাও আছে। 

এদিকে সফরসূচি অনুযায়ী, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে রংপুরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ২টায় তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর ক্যান্টনমেন্টের হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে সেখান থেকে সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউসের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।

সোয়া ২টার দিকে সার্কিট হাউসে পৌঁছে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর বিকেল ৩টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাসমাবেশস্থলে পৌঁছবেন। প্রথমে সেখানে রংপুর বিভাগের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সফরে রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন সরকারপ্রধান। মহাসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার পর বিকেলে আবার একই পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর তিনি আবার রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই রংপুর বিভাগ, রংপুর সিটি করপোরেশন ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিশ্রুতির আলোকে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন রংপুরের পুত্রবধূ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo