• বিশেষ প্রতিবেদন

কুড়িগ্রামে টিসিবি’র পঁচা চাউল বিতরণ, উপকারভোগীদের ক্ষোভ

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০১ আগস্ট, ২০২৩ ২০:২২:৫৩

ছবিঃ সিএনআই

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের রাজারহাটে টিসিবি’র পণ্যে খাবার অনুপযোগী পঁচা ও নিম্নমানের চাউল বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের চাউলের কথা সকলে স্বীকার করলেও দায় নিচ্ছেন না কেউ। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও ডিলাররা। 

জানা গেছে, ২৯ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৪হাজার ৩১১জন উপকার ভোগীর মাঝে টিসিবি’র এই পণ্য বিতরণের কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী ওএমএস ডিলারদের কাছ থেকে চাউল সংগ্রহ করে বিতরণ করেন টিসিবি’র ডিলারগণ। চাকিরপশার ইউনিয়নে প্রথম দিন টিসিবি’র ডিলার রেজাউল করিম রতন, দ্বিতীয় দিন সাজাহান সাজু এবং তৃতীয় দিন হরিস চন্দ্র চাউল বিতরনে অংশ নেন। এবারে জনপ্রতি ২কেজি ডাল ও ২লিটার সয়াবিন তেলের সাথে ৫কেজি করে চাউল বিতরণ করা হয়। প্রথম দিন টিসিবি’র পণ্য বিতরণের সময় নিম্নমানের চাউল দেখে টিসিবির কার্ডধারি সুবিধাভোগীদের অনেকেই আপত্তি করেন। এরপরও দ্বিতীয় দিন নিম্নমানের খাবার অনুপযোগী চাউল বিতরণ শুরু হলে ভোক্তাদের অনেকেই পঁচা চাউল ক্রয় করতে আপত্তি করেন। একপর্যায়ে অনেকেই চাউল ছাড়া অন্য দু’টি পন্য গ্রহণ করেন। আবার অধিকাংশ কার্ডধারি পঁচা চাউল উত্তোলন করে ওখানেই ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেন। এসব অভিযোগ রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার পেলে শেষ দিন খাবার উপযোগী ভালো চাউল সরবরাহের নির্দেশ প্রদান করেন ডিলারদের।

চাকিরপশার ইউনিয়নের মিলেরপাড় এলাকার আশরাফুল ইসলাম ফুলু বলেন-২কেজি ডাল, ২লিটার সয়াবিন তেল ও কেজি চাউল ৪৭০টাকায় ক্রয় করেছিলাম। পরে দেখি চাউলটা খাওয়ার মতো নয়।

চাকিরপশার তালুক গ্রামের ঈসা মিয়া বলেন, একেবারে পঁচা চাউল, হাঁস মুরগীও খাবার নয়। একই গ্রামের আবদুস ছালাম টিসিবি থেকে ক্রয়কৃত নিন্মমানের পঁচা চাউলের নমূণা দেখিয়ে জানান, এসব খাবার অনুপযোগী চাউল দেখে পণ্য ক্রয়ের সময় আপত্তি করলে তারা বলেছিল নিলে নেন না হলে করার কিছু নেই, তাই কিনেছি। তবে চাউল খাবার অনুপযোগী না হওয়ায় খেতে পারিনি।

নাককাটি এলাকার আঃ সালাম মাষ্টার, দেবেন্দ্রনাথ রায়সহ প্রায় অর্ধশতাধিক টিসিবির কার্ডধারী অভিযোগ করে বলেন-পুথি ধরা, পোকা খাওয়া ও লাল টুকটুকে চাউল। এগ্রলো হাঁস মুরগীকে খাওয়ানো ছাড়া উপায় নেই। তারা প্রশ্ন করেন, সরকার স্বল্প মূল্যে গরিব-অসহায়দের টিসিবি’র মাধ্যমে চাউল বিতরণের উদ্যাগ গ্রহণ করেছেন অথচ তা যদি খাওয়াই না যায় তাহলে এই চাল নিয়ে লাভ কি। একই অভিযোগ প্রায় উপকারভোগীর। ভূক্তভোগীরা তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

টিসিবি’র ডিলার রেজাউল করিম রতন বলেন, পঁচা চালগুলো দিনাজপুর গোডাইন থেকে আসলে আমরা রাজারহাট ইউএনও স্যারকে অবগত করি। স্যার এসে চালগুলো দেখেন। এ ব্যাপারে রাজারহাট ওসিএলএসডির কাছেও লিখিত কাগজ রয়েছে। ওসিএলএস’ডির সিলগালা কৃত চাউলের নমূনা দেখিয়ে বলেন, চাউল নেয়ার পর দেখি উপরের কয়েকটি বস্তা ভালো থাকলেও বাকীগুলো নিম্নমানের।

এদিকে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি চেয়াম্যান আবদুল কুদ্দুস প্রামানিক ও উমর মজিদ ইউপি চেয়ারম্যান আদিল বলেন, তাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিতরনকৃত টিসিবি’র চাউলও নিম্নমানের ছিল।

ওএমএস ডিলার বুলেট বলেন, আমরা খাদ্য গুদাম থেকে চাউল উত্তোলন করে টিসিবি’র ডিলারদের সরবরাহ করেছি। সব বস্তা দেখে নেয়া সম্ভব হয়নি। ওসিএলএসডি উপরের বস্তাগুলো ভালো দিলেও নিচের বস্তায় নিম্নমানের চাউল দিবে এটা বুঝতে পানিনি।

ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) শরিফ আহমেদ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দেয়ার বিধান নেই বলে পরে বলেন, আমার চাউল সব ভালো গেছে,আমরা খারাপ চাউল দেইনি।

ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা উজ্বল কুমার বলেন, উপকার ভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার  (৩০ জুলাই) আমি বিষয়টি ইউএনও’স্যারকে অবহিত করেছি। স্যারকে চালের স্যাম্পলও দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম বলেন, রোববার  (৩০ জুলাই) নিম্ন মানের চাউল বিতরনের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তাদেরকে ভালো চাউল দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo