• অর্থনীতি

মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত আমচাষী

  • অর্থনীতি
  • ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১১:২৬:২৩

ছবিঃ সিএনআই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মাঘের শেষ দিক থেকে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমগাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আাগমী অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধে সুবাশিত হয়ে উঠবে প্রকৃতি। মুকুলের যত্ন না নিলে আমের ভালো ফলন সম্ভব নয়। সময়মতো যত্নের অভাবে এবং পোকা ও রোগের আক্রমণের কারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়না। মুকুল ফোটার এই সময়ে পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ হয়। তাই সময়ে প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্নের।

কৃষি বিভাগ বলছে, সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই শতভাগ গাছে মুকুল দেখা দিবে। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে তাই মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে আমচাষীরা। মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে ও পোকার আক্রমণ না হয় সেদিকেই নজর দিচ্ছে কৃষকরা। গাছে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ ও আমবিজ্ঞানীরা৷ 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ গাছেই বের হয়েছে মুকুল। এদিকে কুয়াশার কারণে মুকুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন আম চাষিরা। তারা বলছেন, কুয়াশায় আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ এখনও সব গাছে মুকুল আসেনি। আর পুরোদমে মুকুল আসার সময় শীত কেটে যাবে।

গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বেলাল বাজার এলাকার আমচাষী নজরুল  ইসলাম বলেন, ৮ বিঘা জমিতে আম বাগান কেনা আছে। গাছগুলোর বেশিরভাগেই মুকুল ফুটেছে। সব গাছেই কীটনাশক দিচ্ছি। যাতে পোকার আক্রমণ না হয়। কারন এই মূহুর্তে পোকার আক্রমণ হলে সব মুকুল শেষ হয়ে যাবে। 

শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা এলাকার আম ব্যবসায়ী জিয়ারুল ইসলাম জানান, এবার চারটি  বাগান কিনেছি। শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে মুকুল আসবে। গাছে গোধ হরমন জাতীয় কীটনাশক দেওয়া হয়েছে, যাতে মুকুলগুলো নষ্ট না হয়।

সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের আমচাষী সেলিম রেজা বলেন, কিছু আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এখন গাছের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। তাই ছোট-বড় আম বাগান পরিচর্যায় সময় ব্যয় করতে হয়। এছাড়াও বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে স্প্রে করা হচ্ছে কীটনাশক। এতে পোকা যেমন দূর হবে, তেমনি গাছে দেখা দেবে স্বাস্থ্যকর মুকুল। এতে করে ফলন ভালো হবে বলে আশাবাদী তিনি।

আমচাষী কামরুল  ইসলাম বলেন, অধিক মুনাফার আশায় মৌসুমের আগেই বাগানের যত্ন নেওয়া শুরু করা হয়েছে। এখন ২.৫ ইসি ফিডল্যাম, সালফার শাহেন ও ইমিডাক্লোপ্রিড ইমিসাফি ওষুধ স্প্রে করছি। এতে গাছে বেশি মুকুল আসার সম্ভাবনা থাকে। আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও ভালো হবে।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, এই সময়ে আমের মুকুলের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। মুকুল আসার এই সময়ে সাধারণত কুয়াশা ও পোকার আক্রমণ হয় মুকুলে। তবে একটি কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে এই সমস্যা থাকেনা। ইনশাআল্লাহ, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কুয়াশা শেষ হবে। এতে মুকুলের ক্ষতির সম্ভাবনা কমবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই খুব দ্রুততার সাথে সবগুলো গাছে মুকুল আসবে। তবে এসময়ে বৃষ্টি হলে মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব (আম) গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, মুকুল ফোটার কয়েকদিন পর থেকে পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। এমনকি কুয়াশায় মুকুল পুড়ে যায়। তাই কৃষকদেরকে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ও ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে পোকার আক্রমণ কমতে শুরু করবে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই সব গাছে মুকুল ফুটবে। এসময়ের বিভিন্ন পরিচর্যা নিয়ে আমচাষীদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছে কৃষি বিভাগ।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo