গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ে ও গরম-হাওয়ায় ফুলছড়িসহ জেলার চার উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড বাতাসে গম, মসুর, ভুট্টা, কলা, শাকসবজি ও ধানখেত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষকদের সরকারিভাবে প্রনোদনা ও পূনবার্সনের কথা জানালেন এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বাঁচতে জারি করা কঠিন বিধি নিষেধ (লকডাউন) এর প্রথম দিন গাইবান্ধায় মৌসুমের প্রথম প্রবল বেগে ধেয়ে আসা কালবৈশাখী ঝড়ো বাতাসের তোড়ে জেলার ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নের ৯০০ হেক্টর বোরো ফসল এবং সাড়ে ৮০০ হেক্টর ভুট্টুা, ১৬ হেক্টর কল ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া শাকসবজি, গম, মসুরডাল ও ধানক্ষেত আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ছাড়া আম ও লিচুর মুকুল ঝরে পড়েছে। পাশাপাশি ঝড়ো বাতাসের তোড়ে ভেঙ্গেপড়া গাছে চাপা পড়ে এ জেলায় ১২ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটল। এর মধ্যে ৭ জন নারী, ৫ জন পুরুষ এবং একজন ৫ বছরের শিশু রয়েছেন।
কম খরচে ভাল ফলন ও লাভের আশায় ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর চরাঞ্চলসহ জেলার অনাবাদি জমিতে ব্যাপক হারে এবার চাষ হয়েছে হাইব্রিড ভুট্টা। ফলন ভাল হলেও কৃষকদের স্বপ্ন ভেঙেছে হঠাৎ কালবৈশাখীর গরম বাতাস ও ঝড়ো হাওয়ায়। গত ৪ এপ্রিল দুপুর থেকে শুরু হয় আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। পরে শুরু হয় তীব্র বাতাস, লন্ডভন্ড হয়ে যায় ঘরবাড়ি, গাছপালা, আবাদি জমি।
ভুট্টা চাষে লাভের পরিবর্তে খরচের টাকাই তোলা দায় হয়ে পড়েছে কৃষকদের। হঠাৎ ঝড়ে স্বপ্নবাজ কৃষকদের বুক ভরা কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই। ভুট্টা চাষী নাহিদ বলেন, ‘আমার ৭ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ টাকা। ধার দেনা করে আবাদ করেছি এখন কিভাবে এই টাকা পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না। ভুট্টা ছাড়াও বিভিন্ন তরি- তরকারিসহ অনেক ফসল গরম বাতাসে পুড়ে গেছে। আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত সরকারের প্রতিনিধি খোঁজ নিতে আসে নাই।’
ভুক্তভোগী জমিলা বেগম বলেন, ‘আমারা কিভাবে বাঁচব ভেবে পাচ্ছি না। এখন ঘর বাড়ি রেখে পালাতে হবে; নইলে পাওনাদার এসে টাকার চাপ দিবে। সরকার থাকি যদি হামার (আমাদের) ঘরোক কোন সাহায্য করতো তাহলে একটু রেহাই পেতাম।’ কৃষক সাজু মিয়া বলেন, ‘আমার ৫২ বিঘা জমির ভুট্টা একবারে জ্বলে গেছে।
কি করে সংসার চালাবো। ছেলে মেয়েদের নিয়ে থাকবো কি খাবো। আমরা চরাঞ্চলে বসবাস করি আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই।
প্রতিবছর চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় শতশত বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ৪০ মণ ভুট্টা। খরচ কম; লাভ বেশি। তাই এ অঞ্চলের চাষিরা ব্যাপকভাবে ভুট্টার আবাদ করে থাকে। কিন্তু এ বছর কাল বৈশাখীর থাবায় কৃষকদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো: মাসুদুর রহমান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারিভাবে যতটুকু করার দরকার, বিশেষ করে আউশের প্রনোদনা ও পূনবার্সনে যা যা করা দরকার আমরা কৃষকের জন্য করবো।
মন্তব্য ( ০)